,

হবিগঞ্জের শাহেদ খ্যাত প্রতারক আফজালের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, নৌ বাহিনীর কমোডরের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে প্রচার করে নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত করে প্রতারনার ফাঁদ পেতে সাধারন লোকজনের সাথে প্রতারনাকারী যুবক শাহ আফজাল হোসেন বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার দুপুওে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম এর আদালতে এই মামলা দায়ের করেন হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার সহিদুল ইসলামের মেয়ে খাদিজা আক্তার নাসরিন। বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। মামলার
অভিযোগে জানা যায়, খাদিজা আক্তার নাসরিন এর জমির মাঠ পর্চা ভূল হলে সিলেট জোনাল সেটেলম্যান্ট অফিস থেকে ঠিক করে দিবে বলে শাহ আফজাল ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। টাকা নেয়ার সময় আফজাল নিজেকে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবা উদ্দিন সিরাজের পিএস বলে পরিচয় দেয়। ওই মহিলা জমি ও স্বর্ণ বন্দক এবং দুটি ইজিবাইক বিক্রি করে এই টাকা দিলেও আফজাল কোন কাজ করেনি। পরে টাকাও ফেরত না দিয়ে পাল্টা হুমকি-ধামকি দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহ আফজাল হোসেন ভিআইপিদের সাথে ছবি দেখিয়ে এলাকায় প্রচার করে বঙ্গভবন, গণভভন ও সচিবালয়ে তার অবাধ যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। যে কোন কাজ সে করে দিতে পারে। কোন কোন স্থানে সে নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবেও প্রচার করে। সিলেট থেকে ঢাকায় ডমেস্টিক ফাইটে ভ্রমণ করে সেই ছবিও মাঝে মাঝে পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয় সে। আর সাধারন লোকজন এই ছবি দেখে বিশ্বাস করে শাহ আফজাল এর মাধ্যমে সব কাজই সম্ভব। ফলে বিভিন্ন লোকজন ঠিকাদারী কাজ, চাকুরী, জামিন, জমির দলিল ও পর্চা ঠিক করে দেয়া, নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং বিদেশের ভিসা পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা দেয় তাকে। কিন্তু টাকা দেয়ার পর কোন কাজই সে না করে সে টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা ফেরত চাইলে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলে বিচারপতি তার আত্মীয়। বড় বড় কর্মকর্তারা তার পকেটে। বাড়াবাড়ি করলে সে ফাঁসিয়ে দিবে। ফলে প্রতারিত হয়েও কেউ মুখ খুলেনি তার বিরুদ্ধে। পরে হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শায়েস্তানগর এলাকার ঠিকাদার মোহাম্মদ টিপু ও রিচি গ্রামের ফারুক মিয়া। মোহাম্মদ টিপু অভিযোগে উল্লেখ করেন সিলেট শহরে বড় ধরণের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক আফজাল। মোহাম্মদ টিপুর দায়ের করা মামলায় শাহ আফজাল কে ৪ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। ফারুক মিয়া তার মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন প্রতারক আফজল তার স্ত্রীকে হাই স্কুলের নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিবে বলে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। শাহ আফজাল হোসেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আউশপাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল হেকিমের ছেলে। সে হাই স্কুলের লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। এক পর্যায়ে আনসারে চাকুরী নিলেও দুর্নীতির কারনে চাকুরিচ্যুত হয় সে। পরে সিলেটে গিয়ে এক সাংবাদিকের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বড় বড় নেতাদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ খুজতে থাকে। এভাবে সে বিভিন্ন নেতাদের কাছে চলে যায়। এক পর্যায়ে সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রী এমপিদেও সাথেও ছবি তুলে তা ফেইসবুকে পোস্ট করে। বেশ কয়েকজন লন্ডন প্রবাসীর সাথেও ব্যাক্তিগত পরিচয় সৃষ্টি করে। সে কোন পদবীধারী না হলেও সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিঠিও পেয়ে থাকে।


     এই বিভাগের আরো খবর